ক্ষুধা অবসানে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ব

নাইরোবিতে ইউএসএআইডি’র প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার এক সংবাদ সম্মেলন ভাষণ দিচ্ছেন। পাশে কেনিয়ার মন্ত্রী পরিষদ সচিব মারাগারেট কোবিয়া । ফাইল ছবি , জুলাই ২২, ২০২২ ।

মধ্য জুলাইয়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও পুষ্টিহীনতার অবসান করার ক্ষেত্রে বিশ্ব পিছিয়ে পড়ছে। গত বছর ৮২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন ছিল। এটি ২০২০ সালের তুলনায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ বেশি এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ কোটি বেশি।

ইউএসএআইডি’র প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার বলেন, “২০২১ সালে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, এবং লাতিন আমেরিকাজুড়ে ৫৩টি দেশে রেকর্ড সংখ্যক ১৯ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার অন্তত এই তৃতীয় পর্যায়ের সংকটের সম্মুখীন হন।”

“এই সংখ্যা অনেক কিছুই তুলে ধরে – চাকরি ও আয় হারানো এবং কোভিড-১৯ এর কারণে সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাহত হওয়া, জলবায়ু [পরিবর্তনের] অভিঘাত, দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত, অভাবগ্রস্ত মানুষদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সরকারি বাধা। কিন্তু এতে মানুষের দুর্দশা বৃদ্ধিকারী সর্বসাম্প্রতিক ঘটনাটি আমলে নেয়া হয়নি, ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের বিবেকহীন আক্রমণ।”

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে রুশ সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের কৃষিজমি, কৃষিপণ্য মজুদ ও প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে, এবং কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরোধ করেছে। এর ফলে ২ কোটি টন ভুট্টা ও গম সাইলো ও বন্দরে আটকা পড়েছে। প্রশাসক পাওয়ার বলেন, “তবে ইউক্রেনের শস্যের [সরবরাহের] উপর পুতিনের বাধা যতটা ক্ষতিকর, ঠিক ততটাই ক্ষতিকর হল [তুলনামূলকভাবে] কম আলোচিত রুশ সার রফতানির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি।”

তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম সার রফতানিকারক দেশ, কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে থেকে রাশিয়া বিশ্ববাজারে নিজেদের সরবরাহ কমাতে আরম্ভ করে, যার ফলে গত এক বছরে সারের মূল্য প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়।”

এর ফলে আফ্রিকার কৃষকরা ফসল কাটার সময়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম ফলন পেতে পারেন।

উদীয়মান সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করার সময়ে, মে মাসে, যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক একটি দিক-নির্দেশনা তুলে ধরে। বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত, ক্যারি ফাওলার বলেন, এই উদ্যোগটি “একাধিক কার্যক্রমকে চিহ্নিত করে, যার মধ্যে মানবিক খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করা, বাজার উন্মুক্ত রাখা, সার উৎপাদন বৃদ্ধি করা, এবং খাদ্য ব্যবস্থার প্রতিরোধ সক্ষমতা জোরদার করতে বিনিয়োগের বিষয় রয়েছে।”

তিনি বলেন, “খাদ্য সংকটে সাড়া দিয়ে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২৮০ কোটি ডলারের জরুরি খাদ্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”

ড. ফাওলার বলেন, “এই নজিরবিহীন খাদ্য সংকটের অবসান করতে, আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত রাখবে। আমরা সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে তারা বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার জোরদার করে, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থা তৈরি করে, এবং স্বল্প, মধ্য, ও দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়। বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে – আসুন সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করি।”

[এই সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে]