২০২০ সালের আগস্টে বেলারুশে জালিয়াতিপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দেশব্যাপী ব্যাপক গণ-বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে বেলারুশের নিরাপত্তা বাহিনী অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ করে এবং আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো সরকার ক্রম বর্ধমান নিপীড়ন চালিয়ে তা প্রতিহত করে । সেই থেকে মানবাধিকার বেসরকারি সংস্থাগুলির হিসাব অনুযায়ী সরকার ৪০,০০০ এর বেশি লোককে আটক করে রেখেছে। সরকার শান্তিপূর্ণ, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে সম্পৃক্ত লোকজনদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত অভিযোগ এনেছে। বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সহযোগীদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার বা জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
বেলারুশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন, ভিয়াস্না'র অন্তত ৮জন সদস্য যারা নির্বাচন পরবর্তী মানবাধিকার লংঘন লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়। এ পর্যন্ত ভিয়াস্না'র দুজন কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবকের রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে বেলারুশের কর্তৃপক্ষ ভিয়াস্না মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।
লুকাশেঙ্কো সরকার এখনো ১০০০ এর বেশি রাজনৈতিক বন্দিদের আটক করে রেখেছে। এরা হচ্ছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, যারা তাদের স্বাধীনতার অধিকার, মতামত প্রকাশ, সংগঠন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য নিগ্রহের শিকার হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, "এদের মধ্যে অনেক বন্দি, এবং আগে যাদের আটক করা ও মুক্তি দেয়া হয় বা যাদের দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়, তারা নিন্দনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন"। কারাগার এবং বন্দি শিবিরে দৈহিক অত্যাচারসহ নিষ্ঠূর নিপীড়নের ঘটনা বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। গুরুতর অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী কতিপয় রাজনৈতিক বন্দিদের প্রয়োজনীয় মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বা শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রতি অসাদাচারণ করা হয়েছে।
বিবাদি পক্ষের আইনজীবীদের উপর অবদমনের কারণে প্রায়শই তারা উপযুক্ত আইনি প্রতিনিধিত্ব পান না। বহু আইনজীবীর আইনী লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বা কখনো কখনো তারা কারাবরণ করেছেন, কারণ তারা বন্দি বা বিরোধী নেতাদের প্রতিনিধিত্ব করার সাহস দেখিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন যুক্তরাষ্ট্র “ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সুবিচার ও অপরাধীদের জবাবদিহিতার জন্য কাজ করে যাবে। তিনি লুকাশেঙ্কো সরকারের প্রতি অনতিবিলম্বে এবং বিনা শর্তে সকল রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির আবেদন জানান। তিনি বলেন রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে বেলারুশের জন্য এটাই হবে প্রয়োজনীয় এক পদক্ষেপ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন "অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ সংক্ষেপে (OSCE)এর অংশগ্রহণকারী দেশ হিসাবে তার প্রতিশ্রুতি পালনে এবং মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের আন্তর্জাতিক আইনী বাধ্যবাধকতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা বেলারুশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি"।
"আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক সরকারের সন্ধানে আমরা বেলারুশের জনগণের পাশে থাকবো"।
[এই সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে]