তেরো বছর আগে, সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জবাব দিয়েছিল নৃশংস দমনপীড়নের মাধ্যমে। তার সরকার শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের আটক, নির্যাতন এবং হত্যা করেছে এবং যুদ্ধ পরিসমাপ্তির কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই যুদ্ধ ৫,০০০০০-এরও বেশি জীবন কেড়ে নিয়েছে, সিরিয়ার অর্থনীতি ধ্বংস করেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে জোর করে উৎখাত করেছে।
লক্ষ লক্ষ সিরীয় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে বা প্রতিবেশী দেশগুলিতে বা আরও দূরে আশ্রয় চেয়েছে। জাতিসংঘ তার আন্তঃসীমান্ত অভিযানকে প্রাক-ভূমিকম্পের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার লক্ষাধিক মানুষের কাছে আবার সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে, আসাদ সরকার নিরাপত্তা পরিষদের ২২৫৪ নম্বর প্রস্তাবের মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটাতে আলোচনা করতে অস্বীকার করে চলেছে। এমনটাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রতিনিধি জেফরি ডিলরেন্টিস।
সিরিয়ার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার দাবি করেছে রাশিয়া, তবুও তারা শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে।
রাষ্ট্রদূত ডিলরেনটিসের পর্যবেক্ষণ, এই অনমনীয়তার ফলস্বরূপ, "সিরিয়ার জনগণ অপরিসীম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ১,৩০,০০০-এরও বেশি সিরীয় সরকারী কারাগারে বা আটক-কেন্দ্রে বন্দী, বা নিখোঁজ এবং মনে করা হচ্ছে যে সরকার, দায়েশের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সংঘাতের অন্যান্য পক্ষের দ্বারা তারা নিহত হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে আসাদের ক্ষমা-প্রক্রিয়া চলে। আমরা আশা করেছিলাম এরপর আরও লোকজনকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর পরিবর্তে মাত্র ৫০০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষতবিক্ষত ছিল, কেউ কেউ তাদের স্মৃতি হারিয়েছে, ট্রমা বা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে, অন্যরা শারীরিক আঘাত নিয়ে টিকে আছে”।
তদুপরি, নির্বিচারে আটক এবং নিরপরাধ পুরুষ, নারী ও শিশুদের বলপূর্বক গুম করার নৃশংস কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
সিরিয়া তার সীমানা ছাড়িয়ে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে এই অঞ্চলকে অবৈধ মাদকে প্লাবিত করে। আসাদ সরকার রাশিয়াকে তার অস্থিতিশীল কার্যকলাপ আফ্রিকায় রপ্তানি করার জন্য সিরিয়াকে একটি রসদ-কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।
"এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র আসাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করবে না, এবং আমরা অন্যদের তা করতে দৃঢ়ভাবে নিরুৎসাহিত করেছি," ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রদূত ডিলরেন্টিস:
“আমরা আসাদের উপর থেকে আমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করব না বা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রকৃত, সার্বিক ও স্থায়ী সংস্কার এবং অগ্রগতি না থাকলে পুনর্গঠনকে সমর্থন করব না”।
রাষ্ট্রদূত ডি লরেন্টিস বলেন, "দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি, অন্যায়ভাবে আটকদের মানবিক মুক্তি, নিহত-সহ নিখোঁজদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেটা স্পষ্ট করা এবং আসাদ সরকারকে শেষ পর্যন্ত সৎ বিশ্বাসে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জন্য আমরা পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি।"
এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিমত সম্বলিত একটি সম্পাদকীয়।