রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে "বিশেষ সামরিক অভিযান" শুরু করার পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে এবং সভ্য দেশগুলি একে যথার্থভাবেই রাশিয়ার নৃশংস ও প্ররোচনাহীন আক্রমণ বলে অভিহিত করেছে।
পুতিন যদি বিশ্বাস করেন যে এই "অভিযান" রাশিয়ার জন্য দ্রুত ও যন্ত্রণাহীন হবে, ঘটনাক্রম কিন্তু অন্য কিছু প্রমাণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক এভ্রিল হেইনস কংগ্রেসকে বলেছেন, "মস্কো ইউক্রেনের প্রতিরোধ ক্ষমতা ও অভ্যন্তরীণ সামরিক চ্যালেঞ্জের মাত্রাকে অবমূল্যায়ন করেছে।"
কোনও সন্দেহ নেই যে, রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ইউক্রেনের বেসামরিক জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও অর্থনীতিতে বিধ্বংসী প্রভাব পড়েছে। কিন্তু রাশিয়াকেও উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে। অনুমান করা হয়েছে যে হাজার হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে; কয়েক হাজার রুশ দেশ ছেড়ে চলে গেছে; সামরিক ব্যয় বাড়ছে; এবং ট্যাংক, ড্রোন ও কামানের সরঞ্জামসহ যুদ্ধাস্ত্রের ঘাটতি রয়েছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে যুদ্ধাস্ত্রের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে রাশিয়ার ; এর ফলে ইউক্রেনে সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞ বা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে যে সব দেশের মাথাব্যথা নেই তাদের কাছ থেকেও সাহায্য চাইতে বাধ্য হয়েছে ক্রেমলিন।
ইরান তাদের মধ্যে একটি। রাশিয়া তেহরান থেকে শত শত ড্রোন পেয়েছে যেগুলো ইউক্রেনের অবকাঠামো ধ্বংস করতে এবং বেসামরিক মানুষকে হত্যা করতে ব্যবহার করা হয় ; এখন রাশিয়া দেশের অভ্যন্তরে একটি ইউএভি উৎপাদন কারখানা তৈরির জন্য ইরানের কাছ থেকে উপকরণ পাচ্ছে।
ডিপিআরকে হল আরেকটি দেশ যাদের ইউক্রেনকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় রাশিয়াকে সাহায্য করতে কোন দ্বিধা নেই। ২০২২ সালে রাশিয়া-সমর্থিত ওয়াগনার গ্রুপের দ্বারা ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ায় পদাতিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছিল ডিপিআরকে।
জুলাইয়ের শেষে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোর কাছে উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি বাড়ানোর বিষয়ে ডিপিআরকে’র সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।
কৌশলগত যোগাযোগ সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সমন্বয়কারী জন কার্বি বলেছেন, "নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে তার যুদ্ধ-ব্যবস্থা প্রভাবিত হওয়ায় পুতিন কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন এটি তার এটি আরেক উদাহরণ। ইউক্রেনকে বশীভূত করার চেষ্টায় তিনি অস্ত্র সম্ভারের ব্যাপক সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন ; ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলিতে পৌঁছাচ্ছেন এবং অবশ্যই তিনি তার যুদ্ধ মেশিনের সমর্থন পেতে চীনে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।"
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই সম্ভাবনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ডিপিআরকে রাশিয়ার বর্বরতাকে আরও সহায়তা করবে। সমস্ত বেআইনি অস্ত্র স্থানান্তরের মুখোশ খুলে দেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সকল নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। সমন্বয়কারী কার্বি ঘোষণা করেছেন, "আরও ইউক্রেনীয়কে হত্যা করতে কারও পুতিনকে সাহায্য করা উচিত নয়।"
এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিমত সম্বলিত একটি সম্পাদকীয়।