পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন যেমন সম্প্রতি বলেছেন, "এই বছরটি ইরানের জন্য ভাল বছর ছিল না।" ইরানের প্রধান মিত্র গোষ্ঠীগুলি, হিজবুল্লাহ এবং হামাস, ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের নিকটতম রাষ্ট্রীয় মিত্র সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তাদের অনেক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
যদিও তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে, ইরানের সরকার এখনও ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও দমনমূলক আচরণ বজায় রেখেছে, বিশেষ করে যারা ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বা সঠিক খবর ও তথ্য প্রদান করেছেন।
এরকম একটি উদাহরণ দেখা যায় ডিসেম্বর মাসের ঘটনায়, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের দ্বৈত নাগরিক, সাংবাদিক রেজা ওয়ালিজাদেহ-কে “শত্রু রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা” করার অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওয়ালিজাদেহ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়িত রেডিও ফারদাতে কাজ করতেন। এটি রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির একটি শাখা এবং ভয়েস অফ আমেরিকার একটি সহযোগী বেতার।
তিনি ২০২২ সালে সেখান থেকে চলে আসেন এবং ফারসি ভাষার বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন। রেজা ওয়ালিজাদেহ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার পরিবারের সাথে দেখা করতে ইরানে ফিরে যান এবং সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নভেম্বরে আদালতে তার দুটি অধিবেশন চলাকালীন কোনো প্রসিকিউশন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তার পরিবর্তে বিচারক নিজেই সেই ভূমিকা গ্রহণ করেন।
ওয়ালিজাদেহকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই বছরের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং অন্যান্য জরিমানাও করা হয়। তাকে বর্তমানে এভিন কারাগারে রাখা হয়েছে এবং তার সাথে দেখা করার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একটি সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ওয়ালিজাদেহর কারাদণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন এবং তার "অবিলম্বে মুক্তি এবং ইরানের সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি" দাবি করেন।
“ইরান সরকার বারবার হুমকি, ভয়ভীতি, আটক, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি এবং ইরানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ব্যবহারের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে দমন করেছে”।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর প্রকাশিত ২০২৪ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ইরানকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম স্থানে রাখা হয়েছে। মূল্যায়নটি ইরান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম দমনমূলক দেশ হিসেবে তার পরিচিতি অব্যাহত রেখেছে।
ইরানীদের বছরের দীর্ঘতম রাত উদযাপনের প্রাচীন উত্সব শব-ই ইয়ালদাতে তার সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মুখপাত্র মিলার বলেন, “এই শব-ই ইয়ালদাতে, আমরা ইরানি জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। দমনমূলক পরিস্থিতির মুখেও তাদের সাহস এবং স্বাধীনতার প্রতি তাদের অটল আগ্রহ বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে। আমরা তাদের সংগ্রামে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, কারণ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূর্য উঠবেই।”
(এটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অভিমত সম্বলিত একটি সম্পাদকীয়)