প্রতি জানুয়ারির তৃতীয় সোমবার আমেরিকানরা রেভারেন্ড ডক্টর মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। ড. কিং দক্ষিণাঞ্চলের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের একজন ব্যাপ্টিস্ট ধর্মগুরু ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন নেতা ছিলেন। ১৫ জানুয়ারি তার ৯৪তম জন্মদিবস ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি এবং দাসপ্রথার বিলুপ্তি করে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ সালে যে মোটামুটি ১০০ বছরকালটি আরম্ভ হয়, এবং ১৯৬০ এর দশকের গণজাগরণগুলো, যখন জাতিগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘু ও নারীদের মত রাজনৈতিকভাবে কম প্রতিনিধিত্বে থাকা গোষ্ঠীগুলোর নাগরিক অধিকার সুরক্ষার দাবিতে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান রাস্তায় নেমে আসেন, সে সময়টাতে বেশিরভাগ আফ্রিকান আমেরিকান মানুষজনই তথাকথিত জিম ক্রো আইনের আওতায় পড়তেন। এগুলো ছিল অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় আইন, যা কিনা বর্ণবিভাজন ও স্পষ্টরূপে বৈষম্যকে বৈধতা দিত। এই আইনগুলো সরকারি কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক নজরদারি গোষ্ঠীগুলো সহিংসভাবে প্রয়োগ করত। যে সকল আফ্রিকান আমেরিকান এই বর্ণবৈষম্যমূলক ব্যবস্থাটি পরিবর্তনের চেষ্টা করেন তাদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ সহিংসতার মাধ্যমে মোকাবেলা করা হয়, যা কিনা প্রায়ই ঐ সব সক্রিয়কর্মীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াত।
এমন পরিবেশে ড. কিং, যিনি কিনা মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি তার অনুসারীদের গণ-বর্জন, অবস্থান কর্মসূচি, শান্তিপূর্ণ মিছিল ও অন্যান্য অহিংস অসহযোগ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ঘনঘন চরম প্রতিশোধ নেওয়া বাকি দেশের কাছে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিই প্রদর্শন করেছিল।
আইনের আওতায় আরও সমতার জন্য ড. কিং ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কয়েক বছরের প্রচেষ্টাটি শেষমেষ ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্ট এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ঐ আইনটি উন্মুক্ত এলাকায় বর্ণবৈষম্যকে অবৈধ করা ছাড়াও, চাকরির ক্ষেত্রে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ ও জাতীয়তার ভিত্তিতে বৈষম্যকেও অবৈধ ঘোষণা করে।
তবে নিজের কাজের সুফল ভোগ করার মত সৌভাগ্য ড. কিং এর হয়নি। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল ৩৯ বছর বয়সে তাকে হত্যা করা হয়। তবুও, এক দশকের মধ্যেই বর্ণবিভাজন আইনগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, এবং বর্তমানে বৈষম্য একটি নিন্দিত ও আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “আজ সকল পরিচয়ের মানুষই মিছিল করা অব্যাহত রেখেছেন – ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, ঘৃণা ও বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করতে, ভোটের অধিকার রক্ষা করতে, এবং মানসম্মত চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, ও শিক্ষার জন্য নিজেদের আওয়াজ জোরদার করছেন। এই দিনে আমরা এমন এক ব্যক্তির ইতিহাস নিয়ে চিন্তা করি যিনি কিনা আমাদের দেশ ও আমাদের বিশ্বের বিবেকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।”
[এই সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিফলন রয়েছে]