গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর

ইউএসআইডি’র প্রশাসক সামন্থা পাওয়ার ডানে কলম্বোর মিডিয়া কনফারেন্সে ভাষণ দিচ্ছেন । পাশে শ্রীলংকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জুলি চাং।

১৯ শতকের ফরাসি কূটনীতিক, রাজনৈতিক দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ অ্যালেক্সিস দ্য তকুভাইল এক সময় বলেছিলেন,''আমরা যেভাবে সভ্যতাকে বজায় রাখি, সেটাই হল মিডিয়া''। সম্প্রতি এই কথা উল্লেখ করেছেন ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার। তিনি বলেন, মিডিয়া সম্পর্কে ''এটি উচ্চ প্রশংসা এবং এর অপরিহার্যতার কথাই বলে এই উক্তি।''

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ''স্বাধীন গণমাধ্যম এই মুহূর্তে অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়েছে : এগুলির মধ্যে একটা হল… স্বৈরাচারী শাসকদের প্রত্যক্ষ আক্রমণ।''

''স্বৈরাচারী শাসক স্বাধীন মিডিয়াকে লক্ষ্যবস্তু করে তোলে কারণ তথ্য আমাদের ক্ষমতায়িত করে। যেমনটি তারা বলে, এটা কোনও গোপন কথা নয়, বরং দমনকারী শাসনের এটাই পরিকল্পিত নকশা। মানুষ কোনও আক্রমণকে প্রতিরোধ করছে কিনা, সংস্কারকদের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের সরিয়ে ফেলতে তারা প্রচার করছে কিনা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলছে কিনা--আমাদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের যৌথ বোঝাপড়া ছাড়া সমষ্টিগত পদক্ষেপ সত্যিই শুরু হতে পারে না।''

প্রশাসক পাওয়ার বলেন,''উল্লেখযোগ্য এবং কিঞ্চিৎ কম মনোযোগ পেতে পারে এমন বিষয় হল, মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা সংক্রান্ত যতগুলি সূচক নিম্নগামী হয়েছে তার মধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবনমন হয়েছে সবচেয়ে বেশি।'' এমনটাই চিহ্নিত করেছে গবেষণাদল ফ্রিডম হাউজ।

'গত ১৭ বছরে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চারের মধ্যে শূন্য পাওয়া দেশগুলির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে--১৪ থেকে হয়েছে ৩৩। সেই সঙ্গে, টানা ১৭ বছরের স্বাধীনতার অবনমনের সঙ্গে একই পংক্তিতে উঠে এসেছে তারা। ভাষ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সত্যকে চেপে দিতে ভ্রান্ত তথ্য ছড়ান। তাঁরা সাংবাদিকদের নিশ্চুপ করিয়ে দিচ্ছেন।''

স্বাধীন গণমাধ্যমের অস্তিত্বের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হল, দ্রুত পরিবর্তনশীল মিডিয়া-আবহজনিত আর্থিক স্বাস্থ্যগত সংকট। সামান্থা পাওয়ার জানান, ''এই দুই স্বতন্ত্র চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করতে এবং এগুলি সমাধান করার ব্যবস্থা নিতে সহযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে'' যুক্তরাষ্ট্র।

ক্ষুদ্র মিডিয়া সংস্থাগুলি যাতে অনলাইন সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক হয়ে ওঠে এবং এই সংস্থাগুলিকে কার্যকর ও এমনকি লাভজনক বানানোর সাহায্যার্থে মাইক্রোসফট, ইন্টারনিউজ, অন্যান্য সংস্থা ও সংগঠনগুলির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে ইউএসএআইডি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ চালু করার জন্য।

দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমনকারী কুশীলবও রয়েছে যারা ছোট, স্বল্প-অর্থায়নে চলা স্বাধীন মিডিয়া সংস্থাগুলিকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দিতে দীর্ঘসূত্রী মামলাকে হাতিয়ার করেন। এমন সংস্থাগুলিকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করতে ও হামলার মধ্যেও তারা যাতে প্রকাশনা চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য ইউএসএআইডি ও তার সহযোগীরা স্থাপন করেছে রিপোর্টার্স শিল্ড। সমালোচনা রুদ্ধকারী উদ্দেশ্যমূলক আইনি হুমকি থেকে রিপোর্টার ও এনজিওগুলিকে রক্ষা করার অভিপ্রায়ে তৈরি এ এক সরকারি বীমা তহবিল।

প্রশাসক পাওয়ার বলেন,''আমি এই উপলক্ষ্যে তাঁদের কাজ করার এক আহ্বান হিসেবে ব্যবহার করতে চাই যাঁরা একে উৎসাহব্যঞ্জক মনে করেন এবং যাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত হতে চান বা যোগ দিতে চান।''

এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিমত সম্বলিত একটি সম্পাদকীয়