তথাকথিত “নৈতিকতা পুলিশের” হাতে গ্রেফতারের পর, সেপ্টেম্বরে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে বিক্ষোভকারীরা ইরান জুড়ে শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় সমাবেশ করা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও সঠিক সংখ্যাটি অজানা, তবুও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ডজনকয়েক শিশু সহ শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন ও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নির্মম সহিংসতার কারণে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আরেক দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। নতুন আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রক ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের এক যৌথ উদ্যোগ। নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ছয়জন ব্যক্তি ইরানের কারা ব্যবস্থার নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা। অন্যান্য কারাগার ছাড়াও এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগার সহ সিসতান ও বেলুচিস্তান এবং কুর্দিস্তান প্রদেশের কারাগারগুলো। নিষেধাজ্ঞায় থাকা কর্মকর্তারা একাধিক কারাবন্দিদের নির্যাতন ও তাদের সাথে অসদাচরণের জন্য দায়ী। এমন কারাবন্দিদের মধ্যে রয়েছেন বিক্ষোভকারী, অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দি, এবং ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী।
চলমান বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সবচেয়ে নির্মম প্রতিক্রিয়াগুলোর কয়েকটি সিসতান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সংঘটিত হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভাকারীদের উপর তাজা গুলি চালালে শিশুসহ বেশকিছু মানুষ নিহত হন। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সহিংসভাবে দমন তত্ত্বাবধানে তার ভূমিকার জন্য প্রদেশটির গভর্নর, হোসেইন মোদাররেস খিয়াবানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
আইআরজিসি’র তিন সদস্যও নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তাদের একজন হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি সিসতান ও বেলুচিস্তানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস দমনের জন্য দায়ী আইআরজিসি ও বাসিজ বাহিনীকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন। অপর দুই ব্যক্তি হলেন আইআরজিসি’র দুই কমান্ডার, যারা এমন নিরাপত্তা সংস্থার জন্য দায়ী যা কিনা ইরানের মানুষের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ও নির্মম দমনপীড়নে লিপ্ত। এছাড়াও গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ইসফাহান প্রদেশের পুলিশ প্রধানকেও নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
হ্যাকারদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেওয়ার জন্য সাইবার কার্যক্রমে লিপ্ত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তারা ইরানের কুখ্যাত গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা মন্ত্রক বা এমওআইএস এর সদস্য। তাদের প্রতিষ্ঠিত রাভিন একাডেমি নামের বিদ্যালয়টিকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়। এছাড়াও ইরানের সরকারকে সেন্সরশিপ, নজরদারি, ও গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী একটি কোম্পানীকেও নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক বিবৃতিতে বলেন, “ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইরানের মানুষজন যখন তাদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছে, তখন তাদের সমর্থন করার উপায় খোঁজা আমরা অব্যাহত রাখব।”
[এই সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে]