সম্প্রতি প্রকাশিত হংকং পলিসি অ্যাক্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই গত বছর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বা পিআরসি ও হংকং কর্তৃপক্ষ বিরোধীদের অপরাধী সাব্যস্ত করে মানবাধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করেছে।
হংকং সরকার তাদের জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ অব্যাহত রাখে এবং যাদেরকে তারা সমালোচক মনে করে তাদের নীরব করে দিতে দেশদ্রোহী আইন ব্যবহার করে। ১২০০ বেশি মানুষকে তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে আটক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত বছরে, শহরের শাসনকার্যে হংকংয়ের মানুষের অর্থবহ ভূমিকা পালনে বাধা দিয়ে গিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বা পিআরসি। হংকংয়ের মুখ্য নির্বাহী কমর্কর্ত পদের জন্য প্রথম বারের মতো মাত্র একজন প্রার্থীকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে হংকংয়ের উপর বেজিংয়ের চাপানো জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে লাগাতার ব্যবহার করে গিয়েছে হংকং কর্তৃপক্ষ। হংকংয়ে আইনের শাসন ও মানুষের মৌলিক অধিকার বিনষ্ট করতেই এই ব্যবস্থা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্ট করা ও ফরওয়ার্ড করা-সহ শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মত-প্রকাশের জন্য মানুষকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় এনেছে হংকং কর্তৃপক্ষ। অনলাইন রাজনৈতিক ভাষণে যুক্তদের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় বলে চিহ্নিত করা মামলাগুলিতে অভিযুক্তদের অধিকার খর্ব করা অব্যাহত রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের জামিন দিতে অস্বীকার করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়ার আগে দীর্ঘ সময় ধরে আটক করে রাখা হয়। জুরি কর্তৃক বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় তাঁদের কাছ থেকে এবং তাঁদের মামলাগুলি বেজিং- অনুমোদিত মুখ্য নির্বাহী কমর্কর্তা মনোনীত একজন বিচারপতির তত্ত্বাবধানে চালানোর প্রয়োজন পড়ে।
হংকংয়ের গণতন্ত্রবাদী আন্দোলন বা সরকারের সমালোচনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুশীল সমাজ গোষ্ঠী, গণমাধ্যম সংস্থা, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, অন্যান্য ব্যক্তি ও সংগঠনকে লক্ষ্যবস্তু করে রাখে হংকং ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন কর্তৃপক্ষ। 'বিদেশী শক্তির সঙ্গে যোগসাজশে'র সন্দেহে সেই সময় হংকংয়ের প্রাক্তন ক্যাথলিক বিশপ ৯০ বছর বয়সী কার্ডিনাল যোশেফ জেন ও অন্যান্যদের গ্রেফতার করেছিল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে বন্ধ মিডিয়া সংস্থা অ্যাপল ডেইলি ও স্ট্যান্ড নিউজের সম্পাদক ও কার্যনির্বাহীদের বিচারের আওতায় এনেছিল হংকংয়ের কর্মকর্তারা। জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত অপরাধের অভিযোগে অ্যাপল ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাইকেও বিচারের আওতায় আনা হয় এবং গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত সংবাদ-নিবন্ধ প্রকাশ করার জন্য দেশদ্রোহের অভিযোগ তোলা হয় স্ট্যান্ড নিউজের বিরুদ্ধে। হংকংয়ের বিধি-িনিষেধমূলক রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে স্বাধীন মিডিয়া সংস্থাগুলি বন্ধ হতে থাকে।
হংকংয়ে আইনি শাসনের পতনের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সুরক্ষিত অধিকার ও হংকংয়ের মানুষের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের আবেদন জানান পিআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই সঙ্গে অন্যায়ভাবে আটক হওয়া বা কারারুদ্ধদের মুক্তি দেওয়া এবং হংকংয়ে আইনের শাসন ও মানবাধিকারকে মর্যাদা দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।
এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিমত সম্বলিত একটি সম্পাদকীয়।