দুই বছর আগে বর্মায় সামরিক অভ্যুত্থান ও বিরোধীদের উপর সরকারের হামলার ঘটনার পর থেকে বর্মার মানুষ ব্যাপকভাবে ভোগান্তির শিকার : ৩ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ; প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে ; এবং ১৩ লক্ষ মানুষ ছিন্নমূল।
কিন্তু, এমনকি শাসকের বর্বরতার এই প্রমাণের মুখেও ১১ এপ্রিল সাগাইং অঞ্চলের এক গ্রামে একাধিক বিমান হামলা তাদের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ যখন গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীর নির্মিত ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন উদযাপন করতে জড়ো হয়েছিলেন, তখন সরকার গ্রামবাসীদের উপর অসংখ্য বোম নিক্ষেপ করে বলে জানা গেছে। তারপর, এই এলাকায় একটি হেলিকপ্টার হামলা চালালে মানুষ পালাতে চেষ্টা করে। যদিও কর্মকর্তাদের দেয়া হিসেবে অস্পষ্টই রয়ে গেছে। অনুমান, ১০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এদের অনেকেই শিশু।
পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে, অসামরিক জনগণের উপর বিমান হামলা বাড়িয়ে তুলছে এই সরকার, এর ফলাফল বিধ্বংসী। উদাহরণস্বরূপ, অক্টোবরে বর্মার উত্তরাঞ্চলে এক বিমানহানায় প্রায় ৮০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। ১০ এপ্রিল, সাগাইংয়ে হামলার আগের দিন চিন প্রদেশে বিমানহানায় অন্তত নয়জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী মর্মাহত ও নিন্দার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রধান উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেছেন,''এই হিংসাত্মক হামলাগুলি মানুষের জীবনের প্রতি এই সরকারের অবহেলাকেই তুলে ধরছে এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের অভ্যুত্থানের পর বর্মায় ভয়াবহ রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটে তাদের দায়বদ্ধতাকেই স্পষ্ট করছে।''
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, এই হামলায় তিনি 'আতঙ্কিত'। সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন,''মনে হয়, নৃত্যরত স্কুল শিক্ষার্থী ও অন্যান্য সাধারণ নাগরিকরা...ছিলেন এই নিগৃহীতদের মধ্যে।''
ইইউয়ের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসারালি বলেন,''সাগাইংয়ে সামরিক সরকারের সাম্প্রতিক নৃশংসতার খবরে ইইউ গভীরভাবে মর্মাহত। তারা কয়েক ডজন নিরপরাধ নাগরিকের জীবন কেড়ে নিয়েছে।'' আসিয়ান “কঠোরভাবে” এই বিমানহানার নিন্দা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মূখ্য উপ-মুখপাত্র প্যাটেল বলেন,''এই ভয়ংকর হিংসা বন্ধ করতে, নিরবচ্ছিন্ন মানবিক অ্যাকসেসকে অনুমতি দিতে ও বর্মার জনগণের প্রকৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দিতে বর্মার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
''নাগরিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিসহ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মোতাবেক সামরিক সরকারকে তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। বর্মায় সংঘটিত লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।''
এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিমত সম্বলিত একটি সম্পাদকীয়।