জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে হারার পর ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী, বার্মা বা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী একটি সেনাঅভ্যুত্থান করে। তারা নির্বাচিত বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে এবং এরপরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করে।
তখন থেকে সামরিক সরকার ক্রমবর্ধমান সহিংস পদ্ধতিতে নিজেদের জনগণকে দমন করছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি সবচেয়ে নির্মম আচরণ করা হয়েছে।
এই অশুভ বার্ষিকী উপলক্ষে, ৩১ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ বিবৃতিতে বার্মার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার এবং পরবর্তী সামরিক একনায়কতন্ত্রের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়।
“আমরা কঠোর ভাষায় বার্মার সামরিক সরকার দ্বারা বেসামরিক জনগণের উপর মানবাধিকার লংঘন, যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, এবং সকল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিপীড়ন ও বৈষম্য সহ ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে, স্কুল, বাজার, উপাসনালয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র ধ্বংস হচ্ছে; ২০২১ সালের পর থেকে এ হামলার পরিমাণ প্রায় ২৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গড়ে প্রতিদিন তিনটি বিমান হামলার সমান। যেসব এলাকায় সক্রিয় সংঘর্ষ নেই, সেখানে বিমান হামলার বৃদ্ধি সামরিক বাহিনী কর্তৃক উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি স্পষ্ট প্রমাণ দেয়। ”
যৌথ বিবৃতিতে বার্মার সামরিক শাসকদের প্রতি সহিংসতা প্রশমিত করার, সারাদেশে মানবিক সহায়তা সরবরাহ ও বিতরণের সুযোগ দেওয়ার, এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন পুরোপুরি মেনে চলার পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘের মতে, অভ্যুত্থানের পর থেকে চার বছরে মানবিক সহায়তার চাহিদা কুড়িগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি, প্রায় ১ কোটি ৯৯ লক্ষ মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটাতে এখন মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। আরও ১ কোটি বায়ান্ন লক্ষ মানুষের খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে, অন্যদিকে প্রতিরোধযোগ্য রোগের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বার্মার কয়েক লক্ষ নাগরিক দেশটির অভ্যন্তরে এবং বাইরেও বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এদিকে, মাদক উৎপাদন ও পাচার, প্রতারণার কেন্দ্র এবং মানব পাচার সহ আন্তর্জাতিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বর্তমান গতিপথ বার্মা বা এই অঞ্চলের জন্য স্থিতিশীল নয়। এখনই সময় বার্মার সামরিক সরকারের নিজেদের নীতি পরিবর্তন করার। আমরা বার্মার সামরিক সরকারকে বেসামরিক মানুষ এবং তাদের অবকাঠামোর ক্ষতি সহ সহিংসতা বন্ধ করতে, সকল রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিতে, এবং সকল পক্ষের সাথে প্রকৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করতে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। এই ধাপগুলি যেকোনও শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের দিকে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা মিয়ানমারের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন।”
(এটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অভিমত সম্বলিত সম্পাদকীয়)